সেলিম ওসমানের বিলাসবহুল ২ বাড়ি কিনেছেন যিনি


নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের সদস্য সাবেক এমপি শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান ও প্রয়াত নাসিম ওসমানের নাম শুনলে একদা যে শহরে ‘কাঁপন’ ধরত, সেখানে এখন রাজ্যের নীরবতা। দুই ভাই ও তাদের পরিবারের সদস্যরা সব লাপাত্তা। তাদের বাপ-দাদার রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও স্মৃতিময় ঐতিহাসিক বাড়িগুলো এখন সুনসান, জীর্ণ।

একে একে ওসমান পরিবারের বাড়িঘর-সহায়সম্পদ সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

এরই মধ্যে সেলিম ওসমানের প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার দুটি বহুতলবিশিষ্ট বাড়ি বিক্রি হয়ে গেছে। আরো বিক্রির গুঞ্জন এখন শহরজুড়ে। অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরেজমিনে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওসমান পরিবার বাড়িঘর বিক্রি করে চলে যাচ্ছে! নারায়ণগঞ্জের ‘ধনকুবের’ হিসেবে পরিচিত ফকির অ্যাপারেলসের মালিক ফকির মনিরুজ্জামান এরই মধ্যে ওসমান পরিবারের সদস্য ও সাবেক এমপি সেলিম ওসমানের দুটি বাড়ি কিনে নিয়েছেন বলে জানা যায়।

গত সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের উত্তর চাষাঢ়ায় রামবাবুর পুকুরপারে সরেজমিনে গিয়ে সেলিম ওসমানের মালিকানাধীন পাশাপাশি দুটি আলিশান বহুতল ভবনের প্রধান ফটকে মালিকানা পরিবর্তনের দুটি নামফলক দেখা যায়। সেখানে লেখা রয়েছে, ‘ক্রয়সূত্রে এই বাড়ির মালিক ফকির অ্যাপারেলস লিমিটেড, বিসিক।’

উপস্থিত স্থানীয় লোকজন জানায়, দুটি বাড়িতে এখন ভাড়াটিয়ারা বসবাস করছেন। গেটে প্রহরারত একজন নিরাপত্তাকর্মী জানান, গত ৫ আগস্টের পর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এই দুটি বাড়ি ভাঙচুর করতে এলেও বাড়ির মূল গেটে মালিকানা পরিবর্তনের নামফলক দেখে হামলা ও  ভাঙচুর না করে ফিরে যায়।


তবে বাড়ি দুটি ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পরে কিনেছেন বলে প্রচার থাকলেও ফকির গ্রুপ তার আগেই কেনা হয়েছে বলে স্বীকার করেছে।

এ বিষয়ে ফকির অ্যাপারেলসের কর্ণধার ফকির মনিরুজ্জামানের সঙ্গে আজ কথা বলতে গেলে, তার পিএস মোক্তার হোসেন এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে এর কয়েক মিনিট পরই ফকির অ্যাপারেলস থেকে নিজেকে এজিএম (অ্যাডমিন) পরিচয় দিয়ে নাম গোপন রেখে একজন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় তিনি বলেন, ‘বাড়ি দুটি এক বছর আগেই কেনা হয়। তবে বাজারমূল্য কত, সেটি বলা যাবে না।

পরে এলাকাবাসীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বললে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, ‘গত ৫ আগস্টের পর ওসমান বংশের তিন প্রভাবশালী ভাইয়ের পরিবার একযোগে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তাই সঠিক তথ্য দেওয়া সম্ভব না। তবে আমরা যেটুকু শুনতেছি, তাতে ওসমান পরিবারের সবাই পালানোর আগেই তাদের সহায়-সম্পদ বিক্রি করে গেছেন। 

চাষাঢ়া এলাকায় যার সঙ্গেই কথা হয়েছে, তাদের প্রায় প্রত্যেকেই ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের আগেই ওসমান পরিবার ‘পরিণতি’ আঁচ করতে পেরে আগেভাগেই সহায়-সম্পদ বিক্রি শুরু করেছে বলে জানিয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানও চাষাঢ়ার দুটি বিলাসবহুল বাড়ি বিক্রি করে গেছেন বলে স্থানীয় লোকজন কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত উত্তর চাষাঢ়ায় সেলিম ওসমানের দুটি বিলাসবহুল বহুতলবিশিষ্ট অট্টালিকা ৫ আগস্টের আগেই বিক্রি হয় বলে জেনেছি। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ