দৌলতদিয়ার ‘নীলা’ হয়ে ওঠার গল্প...

দেশের অন্যতম চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে রুনা খানের পর্দা উপস্থিতি প্রায় দুই দশকের। মঞ্চ হয়ে টিভি, সিনেমা এমনকি ওটিটি অধ্যায়েও নিজের সেই অবস্থান জারি রেখেছেন। যদিও চোখে পড়ার মতো ওজন কমিয়ে গত বছরটা (২০২৪) সেই ধারায় বেশ ‘ছন্দপতন’ ঘটালেন! অবশ্য সেটিকে ঠিক ‘পতন’ বলা যাবে কিনা; সেটি বিবেচনা করা সময়সাপেক্ষ। তবে গত বছরের পুরোটা প্রায় অভিনয়ের চেয়েও অভিনেত্রী আলোচনায় ছিলেন তার ঝরঝরে শরীর আর সাহসী ফটোশুটের সূত্রে ধরে।

সে বিবেচনায় শেষ বছরটা রুনার অম্লমধুর কেটেছে। তবে নতুন বছরের শুরুতেই দারুণ এক ওপেনিংয়ের অপেক্ষায় আছেন অভিনেত্রী। এভাবেও বলা যায়, ২০২৪-এর অন্তর্বর্তী সময় পেরিয়ে রুনা খান যেন ফের ফিরেছেন তার আসল পরিচয়ে। দেশের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক উৎসবের (ডিআইএফএফ) বাংলাদেশ প্যানারোমা বিভাগের মাধ্যমে প্রিমিয়ার হতে যাচ্ছে রুনা খানের পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘নীলপদ্ম’। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় জাদুঘরে প্রথম প্রদর্শিত হবে ছবিটি।

রুনা খান মনে করেন, এটি তার জন্য এবং সিনেমাটির জন্য নতুন বছরের দারুণ সূচনা। তার আগে জেনে নেওয়া যাক ছবিটি সম্পর্কে। এটি নির্মাণ করেছেন তৌফিক এলাহি। সিনেমার মূল চরিত্রে নীলার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রুনা খান। আরও আছেন রাশেদ মামুন অপু, একে আজাদ সেতু, সুজাত শিমুল, রোকেয়া প্রাচী, শাহেদ আলী প্রমুখ।

২০২৩ সালের এমনই এক শীতে (জানুয়ারি) ‘নীলপদ্ম’র শুটিং ইউনিটে ঢুকেছিলেন রুনা খান। সেই স্মৃতি টেনে অভিনেত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জানুয়ারির দিকে। শীতের সময়। সেই প্রথম রাজবাড়ী জেলার বিখ্যাত দৌলতদিয়ায় যাই। টানা তিন দিন ছিলাম ওখানে। জীবনে প্রথম গেলাম সেখানে। নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলাম। যে অভিজ্ঞতা মানুষ হিসেবে অসম্ভব সমৃদ্ধ ও সুন্দর।’


দৌলতদিয়া সম্পর্কে যারা জানেন, তারা তো জানেনই। যারা জানেন না, তাদের জন্য বলা, দৌলতদিয়ায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পতিতাপল্লি। এটি এশিয়ার সবচেয়ে বড় গণিকালয়গুলোর একটি। এখানে প্রায় চার হাজার যৌনকর্মী পতিতাবৃত্তিতে জড়িত।

‘নীলপদ্ম’র মূল চরিত্র নীলাকেও দেখানো হয়েছে এই পল্লির একজন যৌনকর্মী হিসেবে। যাতে নীলার মাধ্যমে উঠে এসেছে এই পেশার মানুষের জীবনের গল্প। চরিত্র হিসেবে এটা যেকোনও অভিনেত্রীর জন্য চ্যালেঞ্জিং এবং স্পর্শকাতরও বটে। সেই বিবেচনায় নীলা চরিত্রে নিজেকে কেমন করে জড়ালেন, সেই গল্প শোনা যাক রুনা খানের বয়ানে।

‘‘নীলাকে আমি খুঁজে পাই অভিনেতা সজল ভাইয়ের মাধ্যমে। তিনি একদিন আমাকে ফোন করে বলেন নির্মাতা তৌফিক এলাহির কথা। সজল ভাই বললেন, ‘গল্পটা আমি শুনেছি। তোর জন্য চরিত্রটা ঠিকঠাক হবে। তুই সিটিং দিয়ে দেখ। পছন্দ হলে করিস।’ এরপর তৌফিক ভাই যোগাযোগ করলেন। গল্পটা শুনলাম। চিত্রনাট্য পড়লাম। আমার পছন্দ হলো। কাজটি করে ফেললাম’’, জানালেন রুনা। 

রুনা মনে করেন, অর্থ বা জনপ্রিয়তার বাইরে গিয়ে প্রতিজন শিল্পীর ভেতরেই এমন কিছু চাওয়া থাকে; যেটা সে নিজের কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করতে চায়। ‘নীলপদ্ম’ তার কাছে তেমনই একটা কাজ। যে কাজটির মাধ্যমে সমাজকে কোনও বার্তা দিতে চাননি তারা, তবে একই রাষ্ট্রের দুটি আলাদা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে চেয়েছেন।

নিজের চরিত্র প্রসঙ্গে রুনা বলেন, ‘আমার চরিত্রের নাম নীলা। এই নামেই সিনেমাটির নাম হলো নীলপদ্ম। এটা নীলার জীবনের জার্নির গল্প। সে একজন যৌনকর্মী। ওই শ্রেণির মানুষের জীবন, সামাজিক অবস্থা, সংগ্রামের গল্প বা পরিণতির গল্প এটা। সবচেয়ে ভালো লেগেছে, এটা একটা সরল গল্প। জটিল কিছু না। গল্পধর্মী ছবি। অসাধারণ সব সহশিল্পী পেয়েছি। নির্মাতার এটি প্রথম ছবি। তার সঙ্গেও আমার প্রথম কাজ। সব মিলিয়ে একেবারে সরল ও সরলতার ভেতর দিয়ে কাজটি আমরা শেষ করেছি।’

২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘নীলপদ্ম’র প্রথম প্রদর্শনীতে সবাইকে আন্তরিক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রুনা খান ও তার দল। কারণ এটি থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত। এরপর উৎসবের অংশ হিসেবে ১৯ জানুয়ারি নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হবে ছবিটির দ্বিতীয় প্রদর্শনী। দুটো প্রদর্শনীতেই হাজির থাকছেন রুনা খান।

রুনার প্রত্যাশা, ‘এই ছবিটির মাধ্যমে দৌলতদিয়ার একজন নীলার জীবনের গল্পটি পৌঁছে দিতে চাই সমাজের প্রতিটি স্তরে থাকা তরুণ দর্শকের কাছে। একজন ক্ষুদ্র অভিনয়শিল্পী হিসেবে এটা আমার মনের ভেতরের সুপ্ত ইচ্ছাও বলতে পারেন।’

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ