গৌতম আদানি ১৯৬২ সালের ২৪ জুন ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদে একটি মধ্যবিত্ত জৈন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা শান্তিলাল আদানি ছিলেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং মা শন্তা আদানি ছিলেন একজন গৃহিণী। আট ভাইবোনের মধ্যে গৌতম ছিলেন অন্যতম। তিনি আহমেদাবাদের সেথ সিএন বিদ্যাবিহার স্কুলে পড়াশোনা করেন।
গৌতম আদানি বাণিজ্য বিভাগে কলেজে ভর্তি হলেও পড়াশোনায় বিশেষ আগ্রহী ছিলেন না। মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে তিনি মুম্বাই চলে যান নিজের ভাগ্য গড়ার লক্ষ্যে। সেখানে তিনি হীরার ব্যবসায় শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং ব্যবসায়িক কৌশল সম্পর্কে ধারণা অর্জন করেন।
উদ্যোক্তা হিসেবে উত্থান
১৯৮১ সালে গৌতমের বড় ভাই মনসুখ আদানি একটি প্লাস্টিক কারখানা কেনেন এবং গৌতমকে সেখানে যুক্ত করেন। এ ব্যবসার মাধ্যমেই আমদানি-রপ্তানি খাতে গৌতমের প্রবেশ ঘটে। ১৯৮৮ সালে তিনি Adani Exports (বর্তমানে Adani Enterprises) প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে এ কোম্পানি কৃষিপণ্য ও শক্তি সরবরাহের ব্যবসা করলেও ধীরে ধীরে এটি আরও বৃহৎ খাতে প্রবেশ করে।
১৯৯০-এর দশকে ভারত সরকার বেসরকারি খাতকে অবকাঠামোগত উন্নয়নে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়। গৌতম এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সমুদ্র বন্দর, কয়লা আমদানি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো খাতে প্রবেশ করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি গুজরাটে মুনদ্রা বন্দরের কার্যক্রম শুরু করেন, যা আজ ভারতের বৃহত্তম বন্দর।
বিস্তৃত সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা
গৌতম আদানি তার ব্যবসা দ্রুত সম্প্রসারণ করতে থাকেন। তিনি বিমানবন্দর পরিচালনা, খনি, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং সিমেন্ট শিল্পে বিনিয়োগ করেন। বর্তমানে আদানি গ্রুপের কার্যক্রম শক্তি উৎপাদন, পরিবহন, লজিস্টিক্স, বিমানবন্দর পরিচালনা এবং কৃষিপণ্যসহ আরও অনেক খাতে বিস্তৃত।
বিশেষ করে নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে তাঁর নেতৃত্ব প্রশংসিত হয়। তিনি ঘোষণা দেন যে ২০৫০ সালের মধ্যে তাঁর কোম্পানি কার্বন নিরপেক্ষ হবে।
অসাধারণ সম্পদ এবং প্রভাব
২০২৩ সালের শুরুর দিকে গৌতম আদানি বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হন। তাঁর মোট সম্পদ তখন প্রায় $১৩০ বিলিয়ন (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৪,৩০,০০০ কোটি টাকা)। এটি ভারতের অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধিতে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদানকেই চিহ্নিত করে।
হিন্ডেনবার্গ প্রতিবেদন ও সংকট
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে কারসাজি এবং আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়। এর ফলে আদানি গ্রুপের শেয়ারের মূল্য ব্যাপকভাবে কমে যায়।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর আদানি গ্রুপের বাজারমূল্য প্রায় $১২০ বিলিয়ন (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৩,২০,০০০ কোটি টাকা) কমে যায়। গৌতম আদানির ব্যক্তিগত সম্পদ $৫০ বিলিয়নের (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫,৫০,০০০ কোটি টাকা) বেশি কমে যায়। এটি তাঁকে বৈশ্বিক ধনীদের তালিকায় অনেক নিচে নিয়ে আসে।
বর্তমান পরিস্থিতি
বর্তমানে আদানি গ্রুপ আর্থিক সংকট মোকাবিলা করে স্থিতিশীল হওয়ার চেষ্টা করছে। গৌতম আদানি ঋণ শোধে মনোযোগী হয়েছেন এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তিনি নবায়নযোগ্য শক্তি এবং পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন।
উপসংহার
গৌতম আদানি একজন স্ব-প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তার অনন্য উদাহরণ। শূন্য থেকে শুরু করে তিনি কেবল নিজের জন্য নয়, ভারতীয় অর্থনীতির জন্যও এক বিশাল পরিবর্তন এনেছেন। যদিও সাম্প্রতিক সংকট তাঁর সাম্রাজ্যে অস্থিরতা তৈরি করেছে, তবুও তাঁর উদ্ভাবনী কৌশল এবং সংকল্প তাঁকে এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে সাহায্য করবে। তাঁর জীবন কেবল ভারত নয়, সারা বিশ্বের নতুন প্রজন্মের জন্য একটি অনুপ্রেরণা।
0 মন্তব্যসমূহ