মেক্সিকোর জঙ্গলে সম্প্রতি যে হারানো মায়া শহরের সন্ধান মিলেছে, এটি একটি ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। এই শহরটির নাম দেওয়া হয়েছে "ওকোমতুন," যা মায়া ভাষায় "পাথরের স্তম্ভ" অর্থে ব্যবহৃত হয়।
শহরটি মেক্সিকোর ক্যাম্পেচে রাজ্যের বালামকু সংরক্ষিত এলাকায় অবস্থিত। এই বিশাল প্রাচীন শহরটি গাছপালা ও জঙ্গল দ্বারা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা ছিল এবং এটি খ্রিস্টীয় ২৫০ থেকে ১০০০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে গঠিত মায়া সভ্যতার ক্লাসিক যুগের স্থাপত্যকে প্রতিফলিত করে।
শহরের আবিষ্কার প্রক্রিয়া
গবেষক দলটি অত্যাধুনিক লেজার প্রযুক্তি "লাইডার" ব্যবহার করে এই শহরের খোঁজ পায়। লাইডার প্রযুক্তি বিমান থেকে নির্গত লেজার বিম ব্যবহার করে ভূগর্ভস্থ কাঠামো চিহ্নিত করে, যা ঘন জঙ্গলের আড়ালে লুকিয়ে থাকা স্থাপনাগুলি খুঁজে বের করতে সাহায্য করে। এই পদ্ধতিতে শহরটির একাধিক পিরামিড, প্লাজা, বল খেলার মাঠ এবং বিশাল বড় বড় স্তম্ভ চিহ্নিত করা হয়েছে। পুরো এলাকা প্রায় ৫০ হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত, যেখানে পিরামিডগুলির উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট পর্যন্ত উঠতে পারে।
শহরের স্থাপত্য ও সামাজিক গঠন
ওকোমতুন শহরটিতে প্রায় তিনটি বড় প্লাজা এবং বেশ কয়েকটি দীর্ঘ ও বৃত্তাকার কাঠামো পাওয়া গেছে। গবেষকদের মতে, এই কাঠামোগুলি মায়া সভ্যতার সময়ে সামাজিক ও ধর্মীয় কাজের জন্য ব্যবহৃত হত। বল খেলার মাঠটি মেসোআমেরিকার প্রাচীন বল খেলাধুলার ইতিহাসকে চিহ্নিত করে, যা শুধু বিনোদনমূলক নয় বরং ধর্মীয় ও প্রতীকী অর্থও বহন করত। স্থানীয়দের বিশ্বাস অনুযায়ী, বল খেলার মধ্য দিয়ে দিন ও রাতের সংঘর্ষ অথবা উর্বরতার প্রতীক ফুটে ওঠে।
প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও গবেষণা
গবেষকদের মতে, এই শহরটি সম্ভবত একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসাবে কাজ করত। এটি মায়া সভ্যতার পতনের সময় পরিত্যক্ত হয়ে যায় এবং পরে জঙ্গলে হারিয়ে যায়। প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই অঞ্চলে প্রাপ্ত মৃৎশিল্প, স্থাপত্যের ধরন ও নির্মাণশৈলীর বিশ্লেষণ করছেন যাতে শহরটির সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে আরো জানা যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই শহরটির পতনের কারণ সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্য সংকট ছিল, যা পুরো মায়া সভ্যতার জন্যই বিপদ ডেকে আনে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও ভবিষ্যত গবেষণা
ওকোমতুনের মতো শহরগুলি মায়া সভ্যতার প্রকৃত ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন সম্পর্কে নতুন ধারণা প্রদান করতে পারে। এই শহরের আবিষ্কারটি মায়া সভ্যতার বিস্তৃতি, তাদের ধর্মীয় প্রথা এবং সামাজিক কাঠামো নিয়ে গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। বর্তমানে আরও গবেষণা চলছে, এবং এই গবেষণাগুলি থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে মায়া সভ্যতার গভীর ইতিহাস আরও স্পষ্ট হবে।
এই ধরনের হারানো শহরের সন্ধান ইতিহাসকে নতুন করে জানার একটি বিশেষ সুযোগ দেয়, যা আমাদের প্রাচীন সভ্যতার জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলবে।
0 মন্তব্যসমূহ