মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে দেশটির সরকারি বাহিনী ও রুশ বাহিনী। এসব হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছে। হতাহতদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশুও রয়েছে।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) বিদ্রোহীদের উদ্ধারকারী পরিষেবা হোয়াইট হেলমেটস এ তথ্য জানিয়েছে।
সিরিয়ার সামরিক সূত্রগুলো জানায়, রোববার সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় বিদ্রোহী অধিকৃত শহর ইদলিবে সিরীয় ও রুশ জঙ্গি বিমানগুলো আঘাত হেনেছে।
সিরিয়ার বিতর্কিত ও স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ গুরুত্বপূর্ণ আলেপ্পো শহরে ঢুকে পড়া বিদ্রোহীদের গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয় জানানোর পর এসব বিমান হামলা চালানো হয়।
সিরিয়ার সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা সম্প্রতি বিদ্রোহীদের দখল করা বেশ কয়েকটি ছোট শহর পুনর্দখল করেছে।
সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তুরস্কের সীমান্তের কাছে বিভিন্ন ছিটমহলে আশ্রয় নিয়ে আছেন বিদ্রোহী ও তাদের পরিবারপরিজন মিলিয়ে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। তারা অস্থায়ীভাবে তৈরি তাঁবু ও বাসস্থানে আছেন। এই ছিটমহলের সবচেয়ে বড় শহর ইদলিব।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইদলিবের কেন্দ্রস্থলে একটি ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায়ও হামলা চালানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে থাকা উদ্ধারকর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী, এ হামলায় অন্তত সাতজন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও তাদের মিত্র রাশিয়া বলেছে, তারা বেসামরিক কোনো স্থাপনায় হামলা চালায়নি, বরং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর আস্তানাগুলোকে লক্ষ্যস্থল করেছে।
হোয়াইট হেলমেটের ভাষ্য অনুযায়ী, রোববার ইদলিবে ও এর আশপাশে এবং আলেপ্পোর কাছে বিদ্রোহীদের দখলকৃত অন্যান্য এলাকার লক্ষ্যস্থলগুলোতে বিমান হামলায় নিহতদের মধ্যে ১০ শিশু আছে।
সামাজিক মাধ্যম এক্স এ দেওয়া এক বিবৃতিতে হোয়াইট হেলমেট জানিয়েছে, ২৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া সিরিয়া ও রাশিয়ার হামলায় নিহতের মোট সংখ্যা ৫৬ জনে দাঁড়িয়েছে, এদের মধ্যে শিশু ২০ জন।
এই বিদ্রোহীরা তুরস্কের সমর্থিত মূলধারার সেক্যুলার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট হলেও তাদের সঙ্গে ইসলামপন্থি হায়াত তাহরির আল-শামও আছে, জিহাদি এই গোষ্ঠীটিকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, তুরস্ক ও অন্যান্য কয়েকটি দেশ।
সম্প্রতি বিদ্রোহীরা পুরো ইদলিব প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ২০২০ সাল থেকে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধক্ষেত্রগুলো অনেকটা ঝিমিয়ে ছিল, তার মধ্যে বিদ্রোহীদের এসব আক্রমণ ছিল সবচেয়ে সাহসী পদক্ষেপ। বিদ্রোহীরা শুক্রবার রাতে ইদলিবের পূর্ব দিকে আলেপ্পো শহরেও দ্রুতবেগে প্রবেশ করেছে। এতে সিরিয়ার সেনাবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।
সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আসাদ বলেছেন, ‘সন্ত্রাসীরা শুধু শক্তির ভাষা জানে আর এই ভাষাতেই তাদের গুড়িয়ে দেবো আমরা।’
সিরিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আলেপ্পোতে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে তাদের বহু সেনা নিহত হয়েছেন।
রাশিয়ার যুদ্ধ ব্লগাররা রোববার জানান, বিদ্রোহীরা আলেপ্পোতে দ্রুত ঢুকে পড়ার পর সিরিয়ায় মোতায়েন রুশ বাহিনীর দায়িত্বে থাকা জেনারেল সের্গেই কিসেলকে বরখাস্ত করেছে মস্কো।
সূত্র: রয়টার্স
0 মন্তব্যসমূহ