মদ, কনসার্ট আর Nightlife! আরবের নতুন সংস্কৃতি 😱

আরব দেশগুলোর মধ্যে যেগুলোতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংস্কার এবং কিছু হারাম কার্যক্রমকে হালাল করার প্রচেষ্টা দেখা গেছে, সেগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি দেশের আলাদা পটভূমি এবং প্রেক্ষাপট রয়েছে। নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু দেশের নাম ও তাদের উদ্যোগ বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো:


১. সৌদি আরব (Saudi Arabia)

সৌদি আরব হলো ইসলামের কেন্দ্রস্থল এবং ঐতিহ্যগতভাবে অত্যন্ত রক্ষণশীল দেশ। তবে ২০১৭ সালে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের “ভিশন ২০৩০” প্রকল্প ঘোষণার পর দেশটিতে উল্লেখযোগ্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার দেখা যায়।

সংস্কারের দিক:

  • বিনোদন খাত:
    • আন্তর্জাতিক কনসার্ট এবং মিউজিক ফেস্টিভাল আয়োজন, যেখানে নারী-পুরুষের অবাধ অংশগ্রহণ রয়েছে।
    • ২০১৮ সালে সিনেমা হল পুনরায় চালু করা হয়।
    • বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্পোর্টস ইভেন্ট, যেমন WWE রেসলিং ও Formula 1, আয়োজন।
  • মদ্যপান:
    • সরকারিভাবে মদ নিষিদ্ধ থাকলেও, নির্দিষ্ট এলাকা এবং উচ্চ পর্যায়ের হোটেলগুলোতে মদের সহজলভ্যতার খবর পাওয়া যায়।
  • নারীর স্বাধীনতা:
    • নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
    • অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া কাজ করার এবং ভ্রমণ করার সুযোগ তৈরি।
  • অন্যান্য পরিবর্তন:
    • রক্ষণশীল পোশাকের বাধ্যবাধকতা কমিয়ে দেওয়া।
    • নাইটলাইফ ও পাবলিক উৎসব আয়োজন।

প্রভাব:

এটি বিদেশি বিনিয়োগ এবং পর্যটন খাতকে আকর্ষণ করার জন্য হলেও অনেক রক্ষণশীল মুসলিম এই পরিবর্তনকে ইসলামের মূল্যবোধের পরিপন্থী বলে মনে করেন।

২. সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE)

সংযুক্ত আরব আমিরাত, বিশেষ করে দুবাই এবং আবুধাবি, আরব বিশ্বের অন্যতম উদার এবং আধুনিক শহর হিসেবে পরিচিত।

সংস্কারের দিক:

  • মদ্যপান:
    • মদের লাইসেন্স সহজ করা হয়েছে।
    • অমুসলিমদের জন্য মদ্যপানকে বৈধ করা হয়েছে এবং এর শাস্তি রহিত করা হয়েছে।
  • নারীর স্বাধীনতা:
    • নারীরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
  • জুয়া:
    • ক্যাসিনো খোলার অনুমতি নিয়ে আলোচনা চলছে।
  • সমাজ ও আইন:
    • যৌথভাবে বসবাস (বিবাহ ছাড়াই) বৈধ করা হয়েছে।
    • ইসলামি পারিবারিক আইনের কিছু ধারা শিথিল করা হয়েছে।

পর্যটনের ভূমিকা:

পর্যটন খাতের উন্নতির জন্য এবং পশ্চিমা পর্যটকদের আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে।


৩. কাতার (Qatar)

কাতার তুলনামূলকভাবে রক্ষণশীল হলেও ২০২২ সালের FIFA বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে দেশটি বিভিন্ন সংস্কারমূলক উদ্যোগ নিয়েছে।

বিশেষ উদ্যোগ:

  • বিশ্বকাপ উপলক্ষে:
    • নির্দিষ্ট স্থানে মদ্যপানের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
    • নারীদের পোশাক এবং সাংস্কৃতিক উৎসবে কিছুটা উদার দৃষ্টিভঙ্গি দেখা গেছে।
  • পরিবর্তন:
    • কর্মক্ষেত্রে নারীদের উপস্থিতি বাড়ানোর প্রচেষ্টা।

সমালোচনা:

অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিদেশি শ্রমিকদের শোষণের অভিযোগের পাশাপাশি রক্ষণশীলতা এবং আধুনিকতার মধ্যে দ্বৈততা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে।


৪. বাহরাইন (Bahrain)

বাহরাইন একটি লিবারেল আরব দেশ হিসেবে পরিচিত।

  • মদের অনুমতি অনেক আগেই দেওয়া হয়েছিল।
  • বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নাইটলাইফ এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলো চালু রয়েছে।
  • ক্যাসিনো ও জুয়ার অনুমোদন নিয়ে আলোচনা চলছে।

৫. মিশর (Egypt)

মিশর আরব বিশ্বের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত, তবে দেশটি ধর্মীয় দিক থেকে মিশ্র প্রকৃতির।

পরিবর্তনের দিক:

  • বিনোদন খাত:
    • সিনেমা, থিয়েটার এবং আন্তর্জাতিক কনসার্টের প্রসার।
    • পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মদের সহজলভ্যতা।
  • নারীর স্বাধীনতা:
    • সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তনে নারীদের অধিক ভূমিকা দেখা যাচ্ছে।

সমালোচনা:

ইসলামপন্থী দলগুলো এই পরিবর্তনগুলোকে সামাজিক অবক্ষয়ের লক্ষণ হিসেবে দেখে।


৬. মরক্কো (Morocco)

মরক্কো একটি পর্যটননির্ভর দেশ।

  • বিদেশি পর্যটকদের জন্য মদ এবং নাইটলাইফ বৈধ।
  • সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে নারীদের অনেক বেশি স্বাধীনতা।

সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি:

আরব দেশগুলোতে এই ধরনের পরিবর্তনগুলোর মূল কারণ হলো:

  1. অর্থনৈতিক প্রয়োজন: তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে সরে গিয়ে পর্যটন এবং বিনিয়োগ বাড়ানো।
  2. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা।
  3. যুবসমাজের চাহিদা: তরুণ প্রজন্মের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা তৈরি।

তবে এসব পরিবর্তন নিয়ে আরব বিশ্বে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। রক্ষণশীল মুসলিমরা এই পরিবর্তনগুলোকে ইসলামী মূল্যবোধের পরিপন্থী হিসেবে দেখেন, অন্যদিকে উদারপন্থীরা এটিকে আরব বিশ্বকে আধুনিকায়নের দিকে নিয়ে যাওয়ার অংশ হিসেবে গ্রহণ করেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ