ডি.বি. কুপার: ইতিহাসের সবচেয়ে রহস্যময় হাইজ্যাকিং কেস


১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বরের একটি ঘটনা ইতিহাসে আজও রয়ে গেছে একটি রহস্য হিসেবে, যা মানুষকে বিমোহিত করেছে এবং তদন্তকারীদের শতাধিক প্রশ্নের সামনে ফেলেছে। এই রহস্যময় ঘটনার কেন্দ্রীয় চরিত্র "ডি.বি. কুপার" নামে পরিচিত, যিনি সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত বিমান হাইজ্যাকারের মধ্যে একজন। যেহেতু আজও তার পরিচয় বা উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি, তাই তিনি আধুনিক কালেও একটি মিথে পরিণত হয়েছেন।

ঘটনা বর্ণনা

১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর, থ্যাংকসগিভিং-এর আগের দিন, একজন মানুষ পোর্টল্যান্ড আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি নর্থওয়েস্ট ওরিয়েন্ট ফ্লাইট ৩০৫ এর টিকিট কিনেছিলেন। তার টিকিটে নাম ছিল "ড্যান কুপার", যা পরে মিডিয়া এবং পুলিশ "ডি.বি. কুপার" হিসেবে ব্যবহার করে। তিনি বিমানে চড়ার পর কেবিন ক্রুদের জানান যে, তার কাছে একটি বোমা আছে এবং তিনি হাইজ্যাক করছেন।

কুপার বিমানের ক্রুদের তার চাহিদা জানান: চারটি প্যারাসুট এবং ২০০,০০০ ডলার নগদ অর্থ। অবাক করার বিষয় হলো, ফেডারেল কর্তৃপক্ষ তার দাবি মেনে নেয় এবং সিয়াটলে অবতরণের পর তার সবকিছু সরবরাহ করে। কুপার টাকা এবং প্যারাসুট নিয়ে ফ্লাইটটি মেক্সিকোর উদ্দেশ্যে যাওয়ার নির্দেশ দেন। ফ্লাইট মাঝ আকাশে থাকা অবস্থায়, কুপার পেছনের দরজা খোলেন এবং প্যারাসুট নিয়ে লাফিয়ে পড়েন, আর এর পর থেকেই তিনি চিরতরে হারিয়ে যান।

তদন্ত ও অনুসন্ধান

কুপারের হারিয়ে যাওয়ার পরপরই তদন্ত শুরু হয়। এফবিআই-এর নেতৃত্বে একটি বিশাল অনুসন্ধান চালানো হয় ওয়াশিংটনের গভীর বনাঞ্চলে, কিন্তু তার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এফবিআই-এর "অপারেশন নরথওয়েস্ট" নামে পরিচিত অনুসন্ধানটি কয়েক বছর ধরে চলেছে, যেখানে তার পরিচয় জানতে প্রায় ১০০০ জনেরও বেশি সন্দেহভাজনকে তদন্তের আওতায় আনা হয়েছিল। কিন্তু কুপারের কোনো নির্দিষ্ট চিহ্ন বা পরিচয় আজও বের করা সম্ভব হয়নি।

কিছু রহস্যময় প্রমাণ

১৯৮০ সালে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ আবিষ্কৃত হয়। কলম্বিয়া নদীর তীরে একটি শিশুর মধ্যে প্রায় ৫৮০০ ডলারের নগদ অর্থ পাওয়া যায়, যা কুপারের টাকার ব্যাগ থেকে এসেছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। এফবিআই নিশ্চিত করে যে এই নোটগুলোর সিরিয়াল নম্বর সেই টাকার সঙ্গে মেলে যা কুপারকে দেওয়া হয়েছিল। তবে, এটি ছাড়া আর কোনো প্রমাণই পাওয়া যায়নি।

কুপারের আসল পরিচয় ও সম্ভাব্য সন্দেহভাজন

এই ঘটনার কয়েক দশক পরে, অনেক সন্দেহভাজনের নাম উঠে এসেছে। কিছু বিশিষ্ট নামের মধ্যে রিচার্ড ফ্লয়েড ম্যাকয় এবং কেনেথ ক্রিস্টেনসেন অন্যতম। কেউ কেউ মনে করেন, কুপার বিমান বাহিনীর সদস্য বা প্যারাট্রুপার ছিলেন, কারণ তিনি প্যারাসুট ব্যবহার এবং আকাশ থেকে ঝাঁপ দেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষ ছিলেন। তবুও, শত শত তত্ত্ব ও গবেষণার পরেও তার প্রকৃত পরিচয় আজও রহস্যই রয়ে গেছে।

ডি.বি. কুপার: কিংবদন্তি ও সংস্কৃতির প্রভাব

ডি.বি. কুপার এর রহস্য আজও সংস্কৃতিতে প্রভাব বিস্তার করছে। তার কাহিনী নিয়ে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র, বই, এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠান। অনেকে কুপারের চরিত্রকে স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে দেখতে শুরু করেছেন এবং তাকে জনসাধারণের চোখে একজন রোমাঞ্চকর চরিত্র হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

উপসংহার

ডি.বি. কুপারের ঘটনা একটি অবিস্মরণীয় রহস্য, যা আধুনিক সমাজে বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কুপার আসলে কে ছিলেন, তিনি কেন এমন কাজ করেছিলেন, এবং তিনি জীবিত ছিলেন কিনা তা আমরা হয়তো কখনোই জানতে পারব না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ