পাকিস্তানে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী লকডাউন উপেক্ষা ও নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে ইসলামাবাদে প্রবেশ করেছে। কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে তাদের এ বিক্ষোভ।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থকরা রাজধানী ইসলামাবাদের ডি-চক চত্বরে পৌঁছানোর চেষ্টা করে।
এ সময় নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে। এরপরই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। বিকালের আগেই অনেকে পৌঁছে গিয়েছিলেন চত্বরে।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, রবিবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পিটিআইয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীদের গাড়িবহর ইসলামাবাদের দিকে যাত্রা শুরু করে। দলের শক্ত ঘাঁটি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পেশোয়ার থেকে প্রধান গাড়িবহরের নেতৃত্ব দেন ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি ও মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপুর।
সোমবার আসিয়া বিবি ইমরানের সমর্থকদের বলেন, ‘তার মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে।’ ওই গাড়িবহরের সঙ্গে থাকা পিটিআই নেতা আরবাব নসিম বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা জিরো পয়েন্টে রয়েছি। আমাদের কর্মীরা ব্যারিকেড সরিয়ে নিচ্ছে।’
তিনি আশা করছেন, দিনের আলো থাকতে থাকতেই, তারা ডি চকে পৌঁছাবেন। তাদের আগামী কর্মসূচি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আরবার নসিম জানিয়েছেন, ‘ডি চকে পৌঁছে, দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি চান তারা।’
পিটিআইয়ের একজন মুখপাত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইমরান সমর্থকরা তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সংসদের বাইরে বসার পরিকল্পনা করছেন। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে খানের কারাগার থেকে মুক্তি। পিটিআইয়ের অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তাদের নেতাকে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে।
৭২ বছর বয়সী খানকে দুর্নীতির মামলায় ২০২৩ সালের ৯ মে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট দু’দিন পরে তার মুক্তির আদেশ দেয়, তবে ২০২৩ সালের আগস্টে তাকে তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় আবার গ্রেপ্তার করা হয়। সেই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে এরপর থেকে তিনি কারাগারেই রয়েছেন।
২০২২ সালের এপ্রিলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দেড় শতাধিক মামলা রয়েছে, যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি পিটিআইয়ের।
বিতর্কিত সংবিধান সংশোধনী বাতিল: চলতি বছরের অক্টোবরে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ, সিনেট ও ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ২৬তম সংশোধনী পাস হয়। এই সংশোধনী বিচার বিভাগের আমূল পরিবর্তন করে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির জন্য তিন বছরের মেয়াদ নির্ধারণ করে, যিনি এখন একটি সংসদীয় কমিটি দ্বারা নির্বাচিত হবেন।
বিরোধীদের দাবি, এ সংশোধনীর ফলে শীর্ষ আদালতের ক্ষমতাকে দুর্বল করা হয়েছে। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বিরোধীদলীয় পিটিআইয়ের নেতা ওমর আইয়ুব খান বলেন, এই সংশোধনী স্বাধীন বিচার বিভাগের শ্বাসরোধ করছে।
‘চুরি করা ম্যান্ডেট’ ফেরতের দাবি: চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের পর পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পি)-সহ একটি ছয়দলীয় জোট শাহবাজ শরীফকে প্রধানমন্ত্রী করে একটি সরকার গঠন করে।
ভোট কারচুপি এবং বিলম্বিত ফলাফলের অভিযোগ তুলে পিটিআই জানায়, ক্ষমতাসীন জোটে ‘ম্যান্ডেট চোর’ রয়েছে। ১৭ নভেম্বর পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে পিটিআই সভাপতি হালিম আদিল শেখ বলেন, তার দল ‘চুরি করা ম্যান্ডেট’ পুনরুদ্ধার করবে।
রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দাবি: গত বছরের ৯ মে ইমরান খানের গ্রেপ্তার দেশব্যাপী বিক্ষোভের সূত্রপাত করেছিল। এরপরই কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে অনেকে এখনও কারাগারে রয়েছেন।
নিরাপত্তাবাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শ্রীনগর মহাসড়কে কিছু দুষ্কৃতকারী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর গাড়ি হামলা চালিয়েছে, যার ফলে চার রেঞ্জার্স সদস্য নিহত এবং আরও পাঁচ রেঞ্জার্স সদস্য ও দুই পুলিশ কর্মকর্তা গুরুতর আহত হয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সংবিধানের ২৪৫ ধারায় নাগরিক প্রশাসনের সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে ‘শুট অ্যাট সাইট’-এর (দেখামাত্র গুলি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা। বাতিল হয়েছে ইসলামাবাদের বেশ কয়েকটি ফ্লাইট।
পিটিআই নেতাদের দাবি, তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি ‘শান্তিপূর্ণ’, সরকার চাইছে একে সহিংস রূপ দিতে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বহু পিটিআই কর্মী আহত হয়েছে বলেও তাদের অভিযোগ।
ইসলামাবাদের ডেপুটি কমিশনার ইরফান নওয়াজ মেমন বিবিসিকে বলেন, বিক্ষোভকারীরা ডি চকে পৌঁছেছে। পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী তাদের থামায়নি এবং পরিস্থিতি বর্তমানে শান্তিপূর্ণ রয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ