ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন


ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের সবসময় সমর্থন প্রকাশের পেছনে একাধিক ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত কারণ রয়েছে। এই সম্পর্কের গঠন ও রক্ষার ইতিহাস এবং বর্তমান পরিস্থিতি বেশ গভীর এবং দীর্ঘদিনের।

১. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

ইসরায়েলের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ১৯৪৮ সালে এবং এর সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এটি মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম এবং একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র তার পাশে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ইসরায়েলকে সমর্থন করা মূলত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি তাদের সম্মান এবং এককভাবে আরব রাষ্ট্রগুলির বিপরীতে একটি স্থিতিশীল মিত্র হিসেবে অবস্থান করানোর প্রয়াস হিসেবে দেখা যেতে পারে।

২. ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কারণ

ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের পেছনে ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক কারণও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক খ্রিস্টান মানুষ ইসরায়েলকে তাদের ধর্মের অংশ হিসেবে বিবেচনা করেন, কারণ বাইবেলে ইসরায়েলের ভূমিকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমেরিকার ইহুদি কমিউনিটিও দেশটির রাজনীতিতে প্রভাবশালী, যাদের সমর্থন ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।

৩. রাজনৈতিক সমর্থন ও লবিং

যুক্তরাষ্ট্রে একটি শক্তিশালী ইহুদি সম্প্রদায় রয়েছে, যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রের মধ্যে প্রভাবশালী। এর মধ্যে বিশেষ করে আইপ্যাক (AIPAC) নামক একটি লবিং গ্রুপ অন্যতম, যারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণী পদক্ষেপে ভূমিকা পালন করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং অন্যান্য রাজনীতিবিদরা এই গোষ্ঠীর সমর্থন পেতে চান কারণ এটি মার্কিন রাজনীতিতে বিশেষ প্রভাব ফেলে।

৪. কৌশলগত এবং সামরিক কারণ

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে মিত্র করে রাখা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীল পরিবেশ এবং বিশেষত ইরানসহ অন্যান্য দেশের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইসরায়েল একটি শক্তিশালী মিত্র। ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা প্রদান করে যুক্তরাষ্ট্র তার মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি ও প্রভাব বজায় রাখতে চায়।

৫. অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা

ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রযুক্তি খাতে ইসরায়েলের অবদান অনেক এবং এই সহযোগিতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি দুই দেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও পরস্পরের উপর নির্ভরশীল।

৬. আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার

ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন রেখে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের মৈত্রী সম্পর্ক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় এবং কূটনৈতিক বিষয়ে দু’দেশকেই লাভবান করে।

উপসংহার

ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের পেছনে ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং কৌশলগত বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এটি কেবলমাত্র একটি দেশের প্রতি অন্য দেশের সমর্থন নয়, বরং একটি জটিল, বহুমুখী সম্পর্ক যা মার্কিন রাজনীতি এবং বৈশ্বিক প্রভাবের সাথে গভীরভাবে জড়িত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ