সালমান হত্যা পরিকল্পনায় ২৫ লাখ রুপির চুক্তি


চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সালমান খানের বাড়িতে চার রাউন্ড গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। সেসময় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু বন্ধ হয়নি বলিউড ভাইজানের হত্যা পরিকল্পনার ছক। এর আগেও চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছিল ভারতীয় পুলিশ।

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকি হত্যার পর আবারও নড়েচড়ে বসেছে বলিউডসহ ভারত প্রশাসন। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলিউড ভাইজানের বাড়ির চারপাশ ঘিরে। একে একে উঠে আসছে এক একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য।


ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুসারে, নাভি মুম্বাইয়ের পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযুক্তরা সবাই বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত। তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং অন্যান্য অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।


এই চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, সালমান খানকে হত্যার জন্য বিষ্ণোই গ্যাং অভিযুক্তদের ২৫ লাখ রুপি দিতে চেয়েছিল। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত এই ষড়যন্ত্রের ছক কষা হয়েছে।


পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, পাকিস্তান থেকে এই গ্যাং বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র এনেছে এবং আরও আনার প্ল্যান করেছিল। এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একে-৪৭, একে-৯২, এম-১৬ রাইফেল, তুরস্কের বিখ্যাত জিগানা পিস্তল ইত্যাদি। এই জিগানা পিস্তল দিয়েই ২০২২ সালের ২৯ মে পঞ্জাবি গায়ক সিধু মুজওয়ালাকে হত্যা করা হয়েছিল।


পুলিশ জানিয়েছে, গোটা ষড়যন্ত্র কেবল অস্ত্র আনা নিয়ে হয়নি, রীতিমতো নজরদারি চালানো হয়েছিল বলিউডে ভাইজান খ্যাত এই অভিনেতার ওপর। সালমান খানের চলাফেরার ওপর নজর রাখতে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জনকে নিয়োগ করা হয়েছিল।


ভাইজান সালমানের মুম্বাইয়ের পানভেলের ফার্মহাউস থেকে শুরু করে গুরুগ্রামের ফিল্ম সিটি, বা তিনি যেখানে যেখানে নিয়মিত শুটিংয়ে যেতেন সেসব জায়গায় তাকে অনুসরণ করত বিষ্ণোই গ্যাংয়ের লোকজন।


চার্জশিটে আরো বলা হয়েছে, সালমানকে মারার জন্য ১৮ বছরের নিচের কিশোরদের নিয়োগ করা হয়েছিল। তারা কানাডার গোল্ডি ব্রার ও আনমোল বিষ্ণোইয়ের থেকে সালমানকে হত্যার হুকুমের অপেক্ষায় দিন গুনত।


পুলিশ আরো জানিয়েছে, ১৯৯৮ সাল থেকে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের হিট তালিকায় রয়েছেন সালমান খান। ওই বছরই একটি সিনেমার শুটিংয়ে গিয়ে তিনি রাজস্থানে একটি কৃষ্ণসার হরিণ মারেন। আর এই বিষ্ণোই গ্যাং কৃষ্ণসার হরিণকে দেবতা রূপে পূজা করে। এর পর থেকেই সালমান খানকে হত্যা করতে চাইছে বিষ্ণোই গ্যাং। একাধিকবার হুমকির পর শেষ পর্যন্ত তার বাড়িতে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে।


তদন্তে জানা গেছে, বুধবার (১৬ অক্টোবর) হরিয়ানার পানিপথ থেকে গ্রেফতার হওয়া সুখা অভিনেতা সালমানকে হত্যার জন্য শুটার অজয় কাশ্যপ ওরফে একে এবং আরও চারজনকে দায়িত্ব দিয়েছিল। কাশ্যপ এবং তাঁর দল সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে সালমান খানের চারপাশে কঠোর নিরাপত্তা এবং বুলেটপ্রুফ যানবাহনের কারণে উচ্চমানের অস্ত্রের প্রয়োজন হবে।


সুখা ভিডিও কলের মাধ্যমে পাকিস্তানভিত্তিক অস্ত্র ব্যবসায়ী ডোগারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এতে অস্ত্র চুক্তির শর্তাবলি নিয়ে আলোচনা করার সময় শালে মোড়ানো একে-৪৭ এবং অন্যান্য উন্নত অস্ত্র দেখানো হয়। ডোগার অস্ত্র সরবরাহ করতে রাজি হন আর সুখা অর্ধেক অগ্রিম টাকা দিতে সম্মত হন।


অভিযোগপত্রে ৫৮ বছর বয়সী সালমানকে হত্যার পরে কন্যাকুমারীতে জড়ো হওয়ার জন্য শুটারদের একটি পরিকল্পনার বিবরণও রয়েছে। যেখান থেকে তারা নৌকায় করে শ্রীলঙ্কায় যাবেন এবং তারপরে এমন একটি দেশে যাবেন যেখানে ভারতীয় তদন্ত সংস্থাগুলো কার্যকরী নয়।
 
তাছাড়া বাবা সিদ্দিকী হত্যার পর হুমকির কথা নিশ্চিত করেছেন সালমানের ভাই আরবাজ খান। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই খুব একটা ভালো নেই। কিন্তু যেটা করা সম্ভব সেটা করার চেষ্টা করছি। আমরা সবাই চেষ্টা করছি যাতে সালমানকে নিরাপদে রাখা যায়। সবাই নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করছে। এর বেশি এখন কিছু বলব না।’
 
লরেন্স বিষ্ণোই বর্তমানে গুজরাটের একটি কারাগারে বন্দী আছেন। তবে তার গ্যাং প্রায়শই ব্যবসায়ীদের থেকে মুক্তিপণ আদায় করে বলে অভিযোগ আছে। ১৯৯৮ সালে দুই কৃষ্ণ হরিণ শিকার মামলার কারণে সালমান খানের ওপর ক্ষুব্ধ তিনি। কারণ, এই কৃষ্ণ হরিণকে বিষ্ণোই সম্প্রদায় পবিত্র বলে মনে করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ