১. ধর্মের উৎপত্তি ও প্রতিষ্ঠাতা
- প্রতিষ্ঠাতা: জরথুস্ত্র (Zoroaster বা Zarathustra) ছিলেন এই ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর জন্ম সম্পর্কে নির্দিষ্ট সময় জানা না গেলেও, ধারণা করা হয় যে তিনি খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ১২০০ সালের মধ্যে পারস্যে (বর্তমান ইরান) জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
- ধর্মের উদ্ভব: পারসি ধর্ম বিশ্বের প্রাচীনতম একেশ্বরবাদী ধর্মগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই ধর্মের মূলমন্ত্র এক সৃষ্টিকর্তার প্রতি আস্থা, যাকে বলা হয় আহুরা মজদা (Ahura Mazda)।
২. প্রধান দেবতা ও মূল বিশ্বাস
আহুরা মজদা: পারসি ধর্মের প্রধান দেবতা হলেন আহুরা মজদা। তাঁকে সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী ও মঙ্গলময় সৃষ্টিকর্তা হিসেবে পূজা করা হয়। আহুরা মজদা সব কিছুর স্রষ্টা এবং সত্য ও মঙ্গলের প্রতীক। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী অশুভ শক্তি, অঙ্গ্রা মাইনু (Angra Mainyu) বা আহ্রিমান, যা মন্দ ও অন্ধকারের প্রতিনিধিত্ব করে।
মুলমন্ত্র:
- ভালো চিন্তা (Good thoughts): সঠিক ও ইতিবাচক চিন্তার প্রতি গুরুত্ব।
- ভালো কথা (Good words): সদা সত্য ও সৎ কথা বলা।
- ভালো কাজ (Good deeds): দান, সাহায্য, ও ন্যায়সঙ্গত কাজ করা।
এই তিনটি মূলনীতি পারসি ধর্মের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক জীবনের ভিত্তি।
৩. উপাসনা ও আচার
পারসি ধর্মাবলম্বীরা মূলত আগুন মন্দিরে উপাসনা করেন। আগুনকে তারা আলোর প্রতীক হিসেবে শ্রদ্ধা করে। তবে তারা আগুনকে দেবতা মনে করে না, বরং এটি সৃষ্টিকর্তার প্রতীক।
আগুন মন্দির:
পারসি উপাসনার স্থানকে বলা হয় আগুন মন্দির বা আতশকদা। সেখানে একটি পবিত্র আগুন অনবরত জ্বালিয়ে রাখা হয়, যা কখনও নিভতে দেওয়া হয় না। এটি পারসিদের বিশ্বাস অনুযায়ী পবিত্রতা ও আলোর প্রতীক। আগুনকে কেন্দ্র করে প্রার্থনা করা হয় আহুরা মজদার উদ্দেশ্যে।পবিত্র পোশাক:
- সদ্রে: একটি সাদা শার্ট যা আত্মার বিশুদ্ধতার প্রতীক।
- কুসতি: কোমরে বাঁধা একটি বিশেষ পবিত্র জরি, যা ধর্মীয় দায়িত্বের এবং ভালো চিন্তা, ভালো কথা, ও ভালো কাজের অনুসরণ প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এই পোশাকটি উপাসনার সময় পরা হয়, যা বিশুদ্ধতা ও ধর্মীয় প্রতিশ্রুতির প্রকাশ।
উপাসনা রীতি:
উপাসনার সময় পারসিরা আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করে। তারা পবিত্র আভেস্তা (Avesta) গ্রন্থ থেকে পাঠ করে এবং আহুরা মজদার প্রশংসা করে। প্রার্থনার ভাষা প্রাচীন পারসি বা আভেস্তা ভাষায় হয়।যাসনা (Yasna):
পারসি উপাসনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল যাসনা, যেখানে আহুরা মজদাকে ভালো চিন্তা, ভালো কথা, এবং ভালো কাজের জন্য সাহায্য কামনা করা হয়। যাসনা একটি বিশেষ আচার যেখানে বিভিন্ন ধরণের প্রার্থনা ও অর্ঘ্য নিবেদন করা হয়।
৪. পারসিদের অবস্থান ও সমাজে প্রভাব
- পারসি ধর্মাবলম্বীদের একটি উল্লেখযোগ্য সম্প্রদায় ভারতে, বিশেষত গুজরাট এবং মুম্বাই অঞ্চলে বসবাস করে। তাদের পূর্বপুরুষরা প্রায় ৮ম থেকে ১০ম শতাব্দীতে পারস্য থেকে ভারতে চলে আসেন ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে।
- ভারতে পারসিরা তাদের সমাজে বিশিষ্ট স্থান অর্জন করেছেন। তাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্য এবং দাতব্য কাজে প্রসিদ্ধ।
0 মন্তব্যসমূহ