জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৫ প্রতিবেদন অনুযায়ী খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশের সাফল্য দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্বে সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ ৩য়, ধান উৎপাদনে ৪র্থ, মাছ উৎপাদনে ৫ম, আম উৎপাদনে ৭ম, পেয়ারা উৎপাদনে ৮ম, এবং আলু উৎপাদনে ৭ম স্থানে রয়েছে। আর পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ রয়েছে প্রথম স্থানে।
অন্যদিকে গার্মেন্ট পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানিয়েছেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের গার্মেন্ট পণ্য রফতানি করবে। তখন বাংলাদেশ হবে বিশ্বের এক নম্বর গার্মেন্ট রফতানিকারক দেশ। উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের গার্মেন্ট পণ্য বিদেশে রফতানি হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রফতানিকৃত কৃষি পণ্যের প্রথমস্থানে রয়েছে পাট ও পাটজাতীয় পণ্য। ২০১০-১১ অর্থবছরে পণ্যটির রফতানি হয়েছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৮ টন। পাঁচ বছরে ৩ লাখ ৪১ হাজার ৭৩৭ টন বেড়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৮৫ টনে। যা প্রায় ৩ গুণেরও বেশি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আলু। ২০১০-১১ অর্থবছরে পণ্যটির রফতানি হয়েছিল ৩৯ হাজার ৫৪০ টন। প্রায় আড়াইগুণ বেড়ে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে রফতানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৪ হাজার ৬১৪ টনে। আলোচ্য সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ৫৫ হাজার ৭৪ টন।
রফতানি ৪০ হাজার ৭১৪ টন বেড়ে তৃতীয় অবস্থনে রয়েছে শুকনোজাতীয় খাবার (বিস্কুট, চানাচুর, মুড়ি ইত্যাদি)। ২০১০-১১ অর্থবছরে পণ্যটির রফতানি হয়েছিল ১৬ হাজার ৭০৬ টন। প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেড়ে ২০১৪-১৫ অথবছরে এর রফতানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৭ হাজার ৪২০ টনে। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে শাকসব্জি। এই পণ্যটির রপ্তানিও বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিনগুণ। ২০১০-১১ অর্থবছরে পণ্যটির রফতানি হয়েছিল ১১ হাজার ৫৫ টন। ২৬ হাজার ৩১৯ টন বেড়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এর রফতানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার ৩৭৪ টনে। প্রায় পাঁচগুণ রপ্তানি বেড়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে মসলাজাতীয় পণ্য। ২০১০-১১ অর্থবছরে পণ্যটির রফতানি পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৬০ টন। ৯ হাজার ৮২০ টন বেড়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এর রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ হাজার ৫৮০ টনে। এরপরই রয়েছে ফল রপ্তানির অবস্থান।
তবে রপ্তানিকৃত কৃষি পণ্যের মধ্যে রপ্তানি বেশি বেড়েছে প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্যের (শুকনো ও মসলাজাতীয় খাবার)। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে এসব পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ৫০,৫৩৪টন। ২০১০-১১ অর্থবছরে পণ্যগুলোর রপ্তানি ছিল ১৯ হাজার ৪৬৬ টন। ২০১৪-০১৫ অর্থবছরে রপ্তানি বেড়ে হয়েছে ৭০ হাজার টন। একই ধারা রয়েছে সবজিতেও। বর্তমানে দেশের প্রায় ১ হাজার প্রতিষ্ঠান ১৪০টি দেশে ৯০ ধরনের কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রফতানি করছে।
এর মধ্যে ১শ’টির বেশি প্রতিষ্ঠান সরাসরি খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও রফতানি দুটোই করছে। প্রতিবছর শুধু রফতানি বাবদই আয় হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। পাশাপাশি এই খাতের সঙ্গে জড়িত প্রায় ২০ লাখ মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রফতানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে উৎপাদন আরো বাড়াতে হবে। কারণ এসব পণ্যের জন্য কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। ফলে প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়।
অন্যদিকে প্রতিযোগী দেশগুলোর পণ্যের মান ও মোড়ক খুবই আকর্ষণীয়। এছাড়া তাদের পণ্যের দামও তুলনামূলক কম। তাই এ বিষয়ে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আহমেদ ফরহাদ বলেন, দ্রুত প্রসার ঘটছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের বাজারের। তবে এক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে তা দূর করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
এ বিষয়ে উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের (রফতানি) উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেন খান বলেন, বিদেশে বাংলাদেশের কৃষি পণ্যের ব্যাপক কদর বেড়েছে। কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা, কৃষি বিষয়ক গবেষণা কাজে উৎসাহ প্রদান এবং কৃষকদের সার-বীজে ভর্তুকিসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের ফলেই কৃষিপণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি বেড়েছে। তবে এই জন্য আরো উদ্যোগ দরকার।
অন্যদিকে উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের (আমদানি) উপ-পরিচালক মো. আবু সাদেক বলেন, রফতানির পরিমাণ বাড়লেও কিছু কিছু পণ্য আমদানি করতে হয়। যেমন তুলা, গম, মসলা, ফল ও হারবালজাতীয় পণ্য। আমাদিন কমাতে উৎপাদনে নানামুখি উদ্যোগ নিতে হবে। এতে রপ্তানিতে মুনাফা বেশি হবে।
বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, কৃষিপণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের কার্গোর ভাড়া বেশি। ভাড়া কমানো ও স্বল্প সুদে রফতানিকারকদের ঋণ দিলে রফতানি কয়েকগুণ বাড়বে।
0 মন্তব্যসমূহ